উৎসব-পার্বণে বই হোক প্রিয় উপহার, বই কেনার থাকুক আলাদা বাজেট

উৎসব-পার্বণে বই হোক প্রিয় উপহার, বই কেনার থাকুক আলাদা বাজেট

মেনে নিতেই হবে বই অমূল্য রতন। বইয়ের প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করতে পারলেই তা কেনা যাবে নিয়ম করে। সেই কবেই সৈয়দ মুজতবা আলী বলে গেছেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। এ তো শুধু কথার কথা কিংবা আবেগের বাণী নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ কথা। বই থেকে যে আনন্দ, যে জ্ঞান অর্জিত হয় তাকে পরিমাপ করা যায় না কোন মূল্যেই। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাষায় আমাদের যে রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে তা দূর করতে বইয়ের কাছেই ফিরতে হবে আমাদের। 

অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় একুশে বইমেলা এলেই আমাদের বই কেনার ধুম পড়ে। সারা বছর থাকি বই- বিমুখ। এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে সবার আগে। বইকে আনতে হবে জীবনের আঙিনায়। যাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে। তবেই জীবন বদলাবে। দুর্নাম ঘুঁচবে জাতির। আমরা আলোকিত জ্ঞানের প্রভায়।

জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কিংবা দাম বেশির অজুহাতে বই কেনার বাড়তি খরচটুকু এড়িয়ে চলতে চান অনেকেই। কিন্তু একটি মধ্যবিত্ত পরিবার চাইলে অনায়াসে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বই কিনতে পারে। এর জন্য দরকার শুধু সদিচ্ছা। সামান্য হিসেব করলেই দেখা যাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপ্রয়োজনীয় খরচও কম নয়। বাহুল্য শপিং কিংবা দামী রেস্টুরেন্টে যিনি দেদারসে টাকা খরচ করছেন তার কাছেই হয়তো বইয়ের দাম অতিরিক্ত মনে হচ্ছে। কেনাকাটা কিংবা ব্যয় মোটেও দোষের কিছু নয়। তবে বই কেনার স্বার্থে এসব খাতের ব্যয় কমিয়ে আনতে পারি। 

অবশ্য বাংলা বইয়ের দাম বেশি—এটা মানতে চাননি সৈয়দ মুজতবা আলী। ‘বইকেনা’ প্রবন্ধে তিনি বাঙালিদের বই না কেনার অভ্যাস সম্পর্কে বলেছিলেন: ‘এ রকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতে কোথাও দেখিনি। জ্ঞানতৃষ্ণা তার প্রবল, কিন্তু বই কেনার বেলা সে অবলা। আবার কোনো কোনো বেশরম বলে, “বাঙালির পয়সার অভাব।” বটে? কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে লোকটা এ কথা? ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে, না সিনেমার টিকিট কাটার “কিউ” থেকে?’

বছর পনের আগেও ঘরে ঘরে বই পড়ার সংস্কৃতি ছিল। বেশিরভাগ মানুষেরই তখন অনেক কম আয়ে সংসার চলতো। কিন্তু প্রতি মাসে বই, মাসিক পত্রিকা কেনার খরচে কোনোদিন টান পড়তো না। মননশীলতার এই  চর্চাই আমাদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। মানুষ যত বইবিমুখ হচ্ছে ততই তার দুরত্ব বাড়ছে মানবিক বোধের সঙ্গে, নির্মল আনন্দের সঙ্গে। অনেক বিলাসী জীবন যাপন সত্ত্বেও আমাদের জীবন অনেকক্ষেত্রেই হতাশা, হাহাকার ভরা। এর প্রধান কারণ শেকড় থেকে সরে যাওয়া। সৌখিনতার নামে ভুল দর্শনের চর্চা করা। আর এই ভুল দর্শন, শেকড়বিচ্ছিন্নতার মূলে রয়েছে আমাদের বইবিমুখতা। 

এখন হতাশ হলে চলবে না। বরং প্রয়োজন চিন্তার নতুন সম্প্রসারণ। আমরা চাইলেই সম্ভব আবার একটি বইমুখী সংস্কৃতি গড়ে তোলা। প্রতি মাসেই আমাদের বিয়ে, জন্মদিনসহ নানারকম দাওয়াত থাকে। এ সব অনুষ্ঠানে বই উপহার দেয়ার সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনতে পারি। আর অন্য উপহার কেনার একই বাজেট, কখনও তার চেয়েও কম বাজেটের এই উপহার আপনার নান্দনিকবোধেরও পরিচয় বহন করবে। 

এখন বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাগুলো নানা ধরণের বই প্রকাশ করছে। একেবারে শিশুতোষ থেকে শুরু করে বয়স অনুযায়ী গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য- সংষ্কৃতি, ভ্রমণকাহিনি, রম্যরচনা, রাজনীতি, দর্শন, মোটিভেশনালসহ নানা বৈচিত্র্যময় বিষয় নিয়ে বই প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ, রুচি- আগ্রহ অনুযায়ী বই উপহার দিলে প্রাপকও আনন্দচিত্তে গ্রহণ করবেন সেটি।  

এইতো কিছুদিন আগেই চলে গেল আমাদের জনপদের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব ১ বৈশাখ। সামনেই আসছে ঈদুল ফিতর। এছাড়াও উৎসবপ্রিয় এদেশে নানা পুজো-পার্বণ লেগেই থাকে। এসব উৎসবে পরস্পরকে উপহার দেয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। 

প্রতিবছর নববর্ষ, ঈদ, পুজো, ক্রিসমাস প্রভৃতি উৎসব ঘিরে বিকিকিনি হয়ে থাকে কোটি কোটি টাকার পোশাক ও অন্যান্য অনুষঙ্গ। চাইলেই এর একটি অংশ ব্যয় করতে পারি বইয়ের কিনতে।

আমাদের এখন সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। একটি জ্ঞান ভিত্তিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে যার কোনো বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী মানব সম্পদ তৈরিতে বই ভিন্ন অন্য কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। এ সত্যকে অনুধাবন করেই আগামী প্রজন্মকে বইমুখী করে তুলতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন এখনই। বই হোক প্রিয় উপহার।

 

 


আপনার পছন্দের যেকোনো বই কিনতে ভিজিট করুন : https://pbs.com.bd/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *